মেট্রোরেলের মতিঝিল থেকে কমলাপুর রুটের প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুরোদমে চলছে কমলাপুর অংশের নির্মাণকাজ। এরইমধ্যে মেট্রো স্টেশনের ৩০টি পিলারের মধ্যে ২৫টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও শিগগিরই সম্পন্ন হবে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক ইউএনবিকে জানান, ‘মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর মতিঝিল-কমলাপুর অংশে গত মার্চের শেষ দিকে ভায়াডাক্ট সংযোজন শুরু হয়েছে। কমলাপুর মেট্রো স্টেশনের কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। এই অংশের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ শতাংশ।’
আরও পড়ুন: বাজেটে মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট ছাড় ঘিরে অনিশ্চয়তা
কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল পরিচালক বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি।
ডিএমটিসিএল থেকে জানা যায়, কমলাপুর পর্যন্ত বাকি ১ দশমিক ১৬ কি.মি. অংশের নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেলের কাজের সুবিধার্থে আগামী ছয় মাস কমলাপুর থেকে টিটিপাড়া সড়কের দুটি লেনের একটি লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।
এমএএন ছিদ্দিক জানান, প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে সড়কের একপাশ বন্ধ রেখে অন্যপাশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজ শেষ হলেই সড়কটি পুরোপুরি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
মতিঝিলের শাপলা চত্বর হয়ে দক্ষিণ কমলাপুর দিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কি.মি. অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬। মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের সড়কে পাইলিং করে নির্মাণ করা হয়েছে মেট্রোরেল পিয়ার। এর মধ্যে মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের সামনের অংশে ৬২৮ ও ৬২৯ নম্বর পিয়ার থেকে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের জন্য বেশকিছু বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙতে হয়েছে। কমলাপুর অংশে মেট্রোরেল লাইন সম্প্রসারণের জন্য শতাধিক বাড়ি ও দোকানপাট উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আরও পড়ুন: ১৯ জুন থেকে নতুন সময়সূচিতে চলবে মেট্রোরেল
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের কমলাপুর অংশের কাজের জন্য ৩৭ ধরনের মাটির পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ১৭৭ পাইলিং, ৬১টি পাইল ক্যাপ, ৩০টি স্টেশন কলাম, ৩৯টি পিয়ার বা ভায়াডাক্ট কলাম, ১৭টি পিয়ার হেড, ১২টি পোর্টাল বিম, ২৯৮টি প্রিকাস্ট সেগমেন্ট, ২৮টি স্প্যান, ৪১০৭ বর্গমিটার কনকোর্স স্ল্যাব, ২৫৪০ বর্গমিটার রেলওয়ে লেভেল স্ল্যাব, ২৭২৩ বর্গমিটার প্ল্যাটফর্ম স্ল্যাব ও ১৬০০ টন ইস্পাত স্ট্রাকচার ব্যবহার করা হবে।
এরমধ্যে ১৭৭ পাইলিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ৬১টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ৪২টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৩৯টি পিয়ারের মধ্যে ২১টির কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর উত্তরা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ২৯৮টি প্রিকাস্ট সেগমেন্টের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মার্চের শেষ দিক থেকে ৬২৮ নম্বর পিয়ার থেকে কমলাপুরমুখী ৬২৯ নম্বর পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬। এটি নির্মাণ করা হয়েছে উড়াল (এলিভেটেড) পথে। রাজধানীর উত্তরা-দিয়াবাড়ী-মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কি.মি. অংশ চালু করা হয়। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশটি গত বছর ৪ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১৬ কিমি উড়ালপথে মেট্রোরেল চলাচল করছে।
আরও পড়ুন: ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শতভাগ কাগজহীন সেবা নিশ্চিত করতে চায় সরকার